13006625_154280371634265_8324698942904874723_nবাংলাদেশের আদি বসবাসকারীরা নাকি হিন্দু, ভাত-ডাল নাকি হিন্দুদের খাবার এ নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক আজকাল ফেসবুকে হচ্ছে। এর পেছনে মূল কারণ ‘পহেলা বৈশাখ’ এর হিন্দুয়ানী কালচার। দাবি করা হচ্ছে, এদেশের আদি বাসিন্দা নাকি হিন্দুরা, এদেশের কালচার নাকি হিন্দুয়ানী কালচার।

তবে ইতিহাস তা স্বীকার করে না। মাত্র ১৬৬৬ সালের কথা, যখন মুঘল সেনাপতি বুযূর্গ উমীদ খান চট্টগ্রাম দখল করলেন। সেই সময়ে চট্টগ্রাম ছিলো অনুন্নত, ঘন অপ্রবেশযোগ্য জঙ্গলে ঢাকা। ১৬২১ সালে মুঘল সেনাপতি মির্জা নাথান উল্লেখ করেছিলেন, এই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে একটি পিঁপড়ার চলাচলও সম্ভব নয়।

সেই চট্টগ্রামকে আস্তে আস্তে মানুষ বসবাসের উপযোগী করার সাধনায় লিপ্ত হলেন মুসলমান শায়েখ-্উলামারা। কীভাবে? ১৬৬৬ সালে বাদশাহ আওরঙ্গজেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বিজিত চট্টগ্রামে একটি ফরমান পাঠান, যেখানে লেখা ছিলো-

“ভূমিটি চাষাবাদের আওতায় আনার পর ভূমির উৎপাদিত সামগ্রী অবশ্যই মসজিদের জন্য খরচ করতে হবে এবং একই সাথে তাঁর নিজের, তাঁর বংশধরদের ও তাঁর উপর নির্ভরশীলদের প্রয়োজনও মেটাতে হবে। এবং তাঁকে অবশ্যই শক্তিশালী রাষ্ট্রটির টিকে থাকার জন্য কায়মনোবাক্যে দুয়া করতে হবে।”

এই ফরমানের বলে বহু দরবেশ ও শায়েখকে চট্টগ্রামের জঙ্গলাকীর্ণ ভূমিগুলো ওয়াকফ বা লাখেরাজ হিসেবে মঞ্জুর করা হয়। উনারা উনাদের অনুসারী মুসলমান কর্মঠ জনতার দ্বারা জঙ্গল কেটে আবাদি জমি স্থাপন করেন এবং সমৃদ্ধ জনপদ গড়ে তুলেন। জনপদগুলো স্থাপিত হতো মসজিদকে কেন্দ্র করে, যেই মসজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা মুসলিম জনগোষ্ঠী তাদের নিজেদের ভরণপোষণ মেটাতো ভূমিতে উৎপাদিত শষ্যের অর্থ দ্বারা।

অর্থাৎ চট্টগ্রামে মুসলিম জনগোষ্ঠী হলো সেই ভূখণ্ডের আদি বসতি স্থাপনকারী। তাহলে হিন্দুরা কোথা থেকে আসলো? এর উত্তর হলো, চট্টগ্রামে মুঘল সেনাবাহিনী ঘাঁটি স্থাপনের পর তাদেরকে অনুসরণ করে চট্টগ্রামে হিন্দু কেরাণী ও সুদদাতারা এসে ভিড় জমায়। পরবর্তীতে যুদ্ধের প্রয়োজন মিটে গেলে মুঘল সেনাবাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রামের জমিদারে পরিণত হয় এবং মুসলিম শায়েখ-দরবেশদের পৃষ্ঠপোষকতায় চট্টগ্রামে গড়ে তোলে সমৃদ্ধ মুসলিম জনপদ।

উল্লেখ্য, মুঘল আমলের এই যে জঙ্গল কেটে আবাদী জমি গড়ে উঠেছিলো, তার ফলশ্রুতিতেই পূর্ববাংলা তখন গোটা ভারতবর্ষের ধান রপ্তানিকারক অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এক ফ্রেঞ্চ তখন লিখেছিলো-“এখানে প্রচুর পরিমাণে চাল আছে, যা সারা দেশে সরবরাহের পরও গোয়া ও মালাবারসহ ভারতের সর্বত্র এবং সেই সাথে সুমাত্রা, মালাক্কা এবং সান্দা দ্বীপপুঞ্জে সর্বত্র রফতানি করা হয়। এদের সবার জন্য বাংলা হলো লালনকারী মা।”

পরবর্তীতে এ অঞ্চলে আসে বেনিয়া ইংরেজ। ব্রিটিশ আমলের ১৭৭০ সালের এক রিপোর্টে দেখা যায়, চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে ভালো জমিগুলোর দুই তৃতীয়াংশই হলো ১৬৬৬ সালের সেই ফরমান অনুযায়ী মসজিদ ও মাজার শরীফ কেন্দ্রিক লাখেরাজ জমি, যা মুসলিম জনসাধারণ গড়ে তুলেছিলো নিজেদের ঐকান্তিক পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ে।
বিপরীতে হিন্দুরা ছিলো অসভ্য। ব্রিটিশরা এটি বর্ণনা করেছে যে, ‘ভালো জমি’ তথা উন্নত জনপদে বসবাসকারী জনসাধারণ ছিলেন মুসলমান, আর হিন্দু শিবপূজারীরা ছিলো জঙ্গলে বসবাসকারী।

অর্থাৎ আমরা দেখতে পেলাম-

১) বাংলাদেশের আদি বসতি স্থাপনকারীরা দ্ব্যর্থহীনভাবে মুসলমান। মুসলমানরা যখন সভ্য জনপদ গড়ে তুলেছিলেন, হিন্দুরা সেখানে বসতি স্থাপনের আশায় উনাদের অনুসরণ করেছিলো।

২) ধান হোক ডাল হোক, সবকিছুর পেছনে অবদান রেখেছেন বাংলার মুসলমানরা। এই ধান-চালের সংস্কৃতি মুসলিম বাংলার শায়েখ-উলামাদের অবদান। মুসলমান শায়েখ-দরবেশগণ উনাদের অনুসারীদের নিয়ে বাংলাকে আবাদ করেছিলেন বলেই এ অঞ্চল চাল-ডালে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে।
বিপরীতে হিন্দুদেরকে দেখুন, কিছুই আবাদ করতে পারে না। তাদের মাটির উপরে ফসল নেই, মাটির নিচে নেই কোন খনিজ সম্পদ। কারণ তারা অভিশপ্ত। তাদের দেশ ভারতে কৃষকেরা না খেয়ে আত্মহত্যা করে।

৩) যে আশ্রিত, সে যদি উদ্ধত আচরণ করে, তবে তাকে আশ্রয় থেকে বের করে দেয়া যায়। ইতিহাস বলছে, এই হিন্দুরা বাংলার বুকে সভ্যতা স্থাপনকারী মুসলমানদের নিকট আশ্রিত ছিলো। সুতরাং তারা যদি বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অবস্থান নেয়, ভারতের দালালি করে, তবে তাদেরকে বের করে দেয়াটা দোষের কিছু হবে না।

৪) ‘পহেলা বৈশাখ’ কিংবা পূজার ন্যায় হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি কখনোই বাংলার আদি সংস্কৃতি নয়। বাদশাহ আওরঙ্গজেব রহমতুল্লাহি আলাইহির ফরমান ভালো করে পড়ে দেখুন, সেখানে লেখা রয়েছে মসজিদকে কেন্দ্র করে জনপদ স্থাপনের অনুমতি দেয়া হবে। অর্থাৎ ইসলামী কালচারের মাধ্যমেই এই অঞ্চল সমৃদ্ধি অর্জন করেছিলো। হিন্দুয়ানীর কোন স্থান এখানে ছিলো না।

বাংলার মুসলমানরা তাদের পূর্বপুরুষদের এসব ইতিহাস জানে না বলেই এখন পহেলা বৈশাখ পালন করতে যায়। ডাল-ভাত খাওয়াকে হিন্দুয়ানী কালচার বলে সাব্যস্ত করে। সভ্যতা স্থাপনকারী মুসলমানদের বাদ দিয়ে জঙ্গলবাসী অসভ্য হিন্দুদেরকে ‘আদি বাসিন্দা’ বলে সাব্যস্ত করে। এভাবেই ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এদেশের মুসলিম জনসাধারণ।

তথ্যসূত্র: ইসলামের অভ্যুদয় এবং বাংলাদেশ, রিচার্ড এম ইটন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সূত্র: দস্তার রাজদরবার ফেসবুক পেইজ থেকে..