বাঁ পা নেই। ডান পায়েও সমস্যা। ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন। রয়েছে শারীরিক নানা সমস্যাও। দৌড়ানো তো দূরের কথা, হাঁটতেই পারেন না। পুলিশও বলছে, তিনি একজন প্রতিবন্ধী (পঙ্গু)। তবু সোমবার তাকে আদালতে আনা হয় হাতকড়া পরিয়ে। নাম তার মো. হাবিবুর রহমান (৪০)। মাদক মামলায় গ্রেফতার তিনি।

পুলিশ প্রবিধানের ৩৩০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘গ্রেফতারকৃত বন্দি এবং বিচারাধীন বন্দিকে তাহাদের পলায়ন বন্ধ করিবার জন্য যাহা প্রয়োজন, তাহার চাইতে বেশি কড়াকড়ি করা উচিত নহে। হাতকড়া বা দড়ির ব্যবহার প্রায় ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ও অমর্যাদাকর। বয়স বা দুর্বলতার কারণে যাদের নিরাপত্তা রক্ষা করা সহজ ও নিরাপদ, তাহাদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করা উচিত হইবে না।’

সরেজমিন দেখা যায়, হাবিবুর রহমানের বাঁ পায়ের হাঁটু থেকে নিচের অংশ নেই। দু’হাতে ক্র্যাচ। বাঁ হাতে হাতকড়া পরানো। সোমবার দুপুরে আদালতের এক পুলিশ তাকে ধরে ষষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে তোলে। আসামির উপস্থিতিতে তার জামিন আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারক আসামির জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেন। শুনানি শেষে আদালত থেকে তাকে জজ কোর্ট হাজতখানায় আনা হয়। বিকালে হাজতখানা থেকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

জানতে চাইলে মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী যুগান্তরকে বলেন, ‘নানা ক্ষেত্রেই পুলিশ এসব মানবাধিকার লংঘন করে আসছে। পঙ্গু ও শিশুদেরও তারা হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করছে বলে বহু অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবন্ধী ও শিশুর ক্ষেত্রে অবশ্যই মানবিক দিক পুলিশের বিবেচনা করা উচিত।’

জজ কোর্ট হাজতখানায় নেয়ার পথে আসামি হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘থাক ভাই। ওগো (পুলিশ) যা মন চায় করতে দেন। আমি আর কোনো কথা বলতে চাই না।’

মামলার নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, রাজশাহীর গোদাগারী থানার বজরু রাজারামাপুর গ্রামে হাবিবুর রহমানের বাড়ি। গত বছরের ৭ নভেম্বর তাকে জয়দেবপুর অস্থায়ী রেলওয়ে পুলিশ ক্যাম্প এলাকা থেকে ৪০ গ্রাম হেরোইনসহ আটক করা হয়। ওই ক্যাম্পের এসআই মো. দাদন মিয়া বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১)-এর টেবিল ১(খ) ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা (ঢাকা রেলওয়ে থানা, নম্বর ৭ (১১) ১৫) করেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে (দায়রা মামলা নম্বর ৭০/১৬) বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলায় পাঁচজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। ১৯ জুন বাদীর সাক্ষ্য নেয়ার দিন ধার্য রয়েছে।

হাবিবুর রহমানকে হাতকড়া পরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে জজ কোর্ট হাজতখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই মোফাখখারুল যুগান্তরকে বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে প্রাধান্য দিয়েই আসামিদের হাতকড়া পরিয়ে আদালতে আনা-নেয়া করা হয়। মানবিক দিক বিবেচনায় পঙ্গু আসামিদের হাতকড়া পরানো হয় না। দু’একটি ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। চলাফেরা করতে অক্ষম- এমন ব্যক্তিদের ভবিষ্যতে হাতকড়া পরানো হবে না।’

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর