TUKU* নিজের নামে রেখেছেন জমি, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত, স্থায়ী আমানত, গাড়ি, স্বর্ণ, অস্ত্র ও কৃষিজমি
* স্ত্রীর নামে রেখেছেন স্বর্ণ, ব্যাংক আমানত, স্থায়ী আমানত, বাড়ি, সঞ্চয়পত্র ও আসবাবপত্র
* বড় ছেলেকে গড়ে দিয়েছেন ভিওআইপি ব্যবসা, টেলিকম প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসার আমানত। বাড়ির জমি, কৃষিজমি ও ব্যাংক আমানত
* ছোট ছেলেকে দিয়েছেন ব্যবসার আমানত, বাড়ির জমি ও কৃষিজমি
* ছেলের বউয়ের নামে রেখেছেন ব্যবসার আমানত, স্বর্ণ ও অলঙ্কার, আসবাবপত্র ও ব্যাংক আমানত

সম্পদের দিক থেকে পাঁচ বছর আগেও অতি সাধারণ মানুষ ছিলেন অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে পান বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। এর কিছুদিন পরই দপ্তর বদলে তাকে দেয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। মন্ত্রিত্ব তার পরিবারের সবার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন তিনি। অ্যাপার্টমেন্ট, আলিশান বাড়ি, গাড়ি, অস্ত্র, ব্যবসা, অকৃষি জমি, কৃষি জমি, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত, স্থায়ী আমানত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্বর্ণ ও অলঙ্কারাদি এখন কি নেই তার! পাঁচ বছরে মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালন করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আর এর প্রায় পুরোটাই অর্জিত হয়েছে অবৈধভাবে। এবার নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগে হলফনামায় নিজ সম্পদের বিবরণ দিতে গিয়ে এসব তথ্য লুকিয়েছিলেন। কিন্তু থলের বিড়াল নিজেই বেরিয়ে আসছে হাঁটি হাঁটি পা পা করে।
সম্প্রতি টুকু পরিবারের সম্পদের বিবরণ দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এই অভিযোগপত্রের সঙ্গে দেয়া হয়েছে সাবেক মন্ত্রী টুকুর অবৈধ পথে অর্জিত বিভিন্ন সম্পদের মালিকানার সমর্থনে প্রয়োজনীয় দলিলাদি। অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর দুর্নীতি তদন্তে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে দুদক থেকে প্রাপ্ত একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে টুকু ও তার অপকর্মের সহযোগীরা এসব নিয়ে যাতে কোনো নড়াচড়া না হয় সেজন্য চাপ জারি রেখেছেন। টুকুকে আবারও মন্ত্রীত্বে পদ পাইয়ে দিতে সরকারের ভেতর একটি মহল তৎপর আছে। টুকুর দুর্নীতি নিয়ে কোনো আলাপ বা অনুসন্ধান হোক এটা তারা চাচ্ছে না। টুকু কর্তৃক সুবিধাভোগী এই মহলের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে এসব তথ্য জানার পরও অনেকেই মুখ খুলছেন না। কিন্তু সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলে সাপ্তাহিক। তাই সব চাপ ও রোষানলে পড়ার আশঙ্কাকে উপেক্ষা করেই টুকু পরিবারের দুর্নীতির অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। দুদক সূত্রে ও মন্ত্রীর এলাকা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে নজিরবিহীন দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে।

টুকুর টাকশাল
মন্ত্রী হওয়ার আগে টুকুর তেমন কোনো সম্পত্তি ছিল না। আর দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতোই ছিল তাদের জীবনযাপন। তার নির্বাচনী এলাকা পাবনার সাঁথিয়ার মানুষেরা এমনটাই জানিয়েছেন। তখন টুকু পরিবারের সদস্যরা এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন, যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু এখন তারা ভিভিআইপি। সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দেয়া হলফনামায় ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদের পরিমাণ দেখান টুকু। আর এবার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেয়া হলফনামায় স্ত্রী, ছেলে, ছেলের বউ ও নিজের নামে তিনি ১৫ কোটি টাকার সম্পদ দেখান। এ হিসেবে পাঁচ বছরে তার প্রদর্শিত সম্পদই বেড়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা বা ২০ গুণ।
প্রদেয় তথ্যে তিনি উল্লেখ করেছেন তার বাৎসরিক আয় ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর ব্যয় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সে হিসেবে তার মাসিক সঞ্চয় এক লাখ টাকার কম। কিন্তু মন্ত্রিত্বের পাঁচ বছরে তার নিজের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পরিবারের সব সদস্য মিলিয়ে ১৫ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি বছর সঞ্চয় করেছেন তিন কোটি টাকা করে। প্রতি মাসে ২৫ লাখ। যা আয়ের কোনো বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। তবে এ হিসাবের বাইরেই রয়েছে আসল হিসাব। অনুসন্ধানে দেখা গেছে তার অপ্রদর্শিত সম্পদের পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকারও বেশি।
৭৫ লাখ টাকার সম্পত্তির মালিক টুকু মন্ত্রী হওয়ার পর কৃষিজমি কিনেছেন। তার দেয়া হিসাবমতে, এখন বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান থেকে ভাড়া পাচ্ছেন প্রায় তিন লাখ টাকা। শেয়ার ও আমানত হিসেবে তার মালিকানায় আছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কামিয়েছেন ছয় লাখ টাকা। ব্যাংকে জমা রেখেছেন ১৬ লাখ টাকা। আরও দুই লাখ টাকা রেখেছেন সঞ্চয়পত্রে। তার স্থায়ী আমানতের (ফিক্সড ডিপোজিট) পরিমাণ প্রায় ৪৬ লাখ টাকা। প্রায় ৭২ লাখ টাকার গাড়ি আছে তার। দশ ভরি সোনা আছে তার। দাবি করেছেন প্রতি ভরির দাম নাকি এক হাজার টাকা করে। তার বাসার ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের দাম মাত্র ৪০ হাজার টাকা। সবগুলো বাড়ি মিলিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) যে কটি লাগিয়েছেন তার দাম, বা ফ্রিজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, এলইডি টিভিসহ অন্যান্য সবকিছুর দাম বাদ দিয়ে শুধু মনে হয় লাইট, ফ্যানের দাম লিখেছেন। এ রকম আরও আছে। আসবাবপত্রের দাম লুকিয়েছেন। একটি আলিশান বাড়ির দাম লিখেছেন ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যা নির্মাণেই শুধু ব্যয় হয়েছে কোটি টাকার বেশি।
টুকু তার সম্পদের হিসাব দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি ২ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকার মালিক। এর মধ্যে তার ব্যাংক দায় আছে ৬৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি পুরোপুরি মিথ্যাচার করেছেন। গ্রামের বাড়ি বৃশালিখায় যে বাড়ির মূল্য তিনি ১০ লাখ দাবি করেছেন, তা দেখলে যে কেউ অনুমান করতে পারবেন এর নির্মাণেই ব্যয় হয়েছে কোটি টাকা। তিন হাজার ৯২৫ বর্গফুটের এই প্রাসাদোপম দ্বিতল বাড়ি বানানোর টাকা তিনি কোথায় পেলেন! ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্য দেখানো পাবনা শহরের দোতলা বাড়িটি আসলে পাঁচতলা। স্থানীয়রা বলছেন এর বর্তমান মূল্য আড়াই কোটি টাকা। এই টাকার উৎস কি কেউ জানে না।
ব্যাংকে জমা দেখানো ১৬ লাখ টাকার বিপরীতে জনতা ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকে তার রয়েছে কোটি টাকার বেশি। অকৃষি জমি ৪৫ কাঠার পরিবর্তে মাত্র পাঁচ কাঠা দেখিয়ে এখানে তিনি প্রায় দুই কোটি টাকা অপ্রদর্শিত রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কমিশনে দেয়া সবগুলো খাতেই তিনি মোটা অঙ্কের টাকা অপ্রদর্শিত রেখেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। তার নিজের নামে থাকা অতিরিক্ত সম্পত্তির মূল্যমান কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা।

স্ত্রীর নামে রেখেছেন অনেক
টুকু নিজের নামের পাশাপাশি অবৈধ সম্পত্তি গড়েছেন স্ত্রীর নামেও। তার দেয়া তথ্যমতে, স্ত্রী বেগম লুৎফুন নেছার নামে ব্যাংকে আমানত আছে এক লাখ ২৮ হাজার টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ টাকা। পোস্টাল সেভিংস আছে এক লাখ ৭৮ হাজার টাকা। স্থায়ী আমানত আছে এক কোটি ৩৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। মাত্র পাঁচ ভরি সোনা, তার দাম মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। পাবনা সদরে তার নামে একটি বাড়ি আছে। এর মূল্য দাবি করা হয়েছে মাত্র এক লাখ টাকা। অথচ বাড়িটির ন্যূনতম মূল্য এক কোটি টাকা হবে বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
টুকুর স্ত্রীর নামে ঢাকার উত্তরায় ১৪ নং রোডের ফ্ল্যাট নং ৮, সেক্টর ১৩-এ ফ্য¬াট নং এ, সেক্টর ৩-এ আরও একটি, এই মোট তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যার দাম দাবি করা হয়েছে ৪৪ লাখ টাকা। যার ন্যূনতম মূল্য তিন কোটি টাকা। এর বাইরে তার স্ত্রীর নামে দেখানো ব্যাংক সম্পত্তির পরিমাণ আরও বেশি। আছে অলঙ্কারাদি, আসবাব ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য। সব মিলিয়ে স্ত্রীর নামেই আছে প্রায় ছয় কোটি টাকার সম্পদ।

ছেলের হাতে পতাকা
বাংলায় প্রবাদ আছে, বাপকে বেটা সওয়ারিকা ঘোড়া। টুকুপুত্র আসিফ শামস যেন ঠিক তাই। পিতার দুর্নীতির পতাকা তিনি ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন এবং একে বিকশিত করেছেন। টুকুপুত্র আসিফ শামস ভিশন টেল কোম্পানির চেয়ারম্যান ও পরিচালক। এটি একটি ভিওআইপি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালক হিসেবে তিনি ভিওআইপি’র লাইসেন্স ফি বাবদ বিটিআরসিকে ১৫ কোটি টাকা অগ্রীম দিয়েছেন। এই টাকার উৎস কি তা সবার অজানা। প্রতিষ্ঠানটি চালাতে প্রতি বছরে সাত কোটি হিসেবে তিন বছরে ২১ কোটি টাকা বিটিআরসি তার কাছে প্রাপ্য। বাৎসরিক লাইন রেন্টের এই বিপুল পরিমাণ টাকা তিনি শোধ করেননি। পিতা শামসুল হক টুকুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি জোরপূর্বক ভিওআইপি ব্যবসা চালিয়েছেন। বিটিআরসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাজস্ব ও নিবন্ধন নবায়ন বাবদ প্রতিষ্ঠানটির কাছে তাদের পাওনা ১৪৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যা এখনও অপরিশোধিত।
ভিওআইপি ব্যবসা সম্পর্কে যারা খোঁজখবর রাখেন তারা জানেন যে, প্রতিদিন কি পরিমাণ টাকা এই খাতে লেনদেন হয়। গত বছর ভিওআইপি খাত থেকে সরকারের আয় একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছিল। প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি টাকা লেনদেনের মধ্যে সরকার পাঁচ কোটি টাকাও পায় না। অভিযোগ আছে এই বিরাট অবৈধ অর্থের লেনদেনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছেলে হিসেবে আসিফ শামস আগাগোড়া যুক্ত ছিলেন। যার মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয় করেছেন। অভিযোগ, এসব অর্থ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা আছে।
আসিফ শামসের নামে এর বাইরেও বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। ৪০ বিঘা জমির মালিকানা পাওয়া গেছে তার নামে। যার দাম তিনি বলছেন, ৮৫ লাখ টাকা। অথচ এলাকাবাসীর দাবি, প্রতি বিঘা জমি বিক্রি হয় চার লাখ ৮০ হাজার টাকা করে। এতে ওই জমির দাম দাঁড়ায় তিন কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে আসিফ শামসের দৃশ্যমান দুর্নীতিই প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।
পিতার ন্যায় আসিফ শামস নিজেও তার স্ত্রীর নামে সম্পত্তি গচ্ছিত রেখেছেন। তার স্ত্রী মুসলিমা খাতুন এসএম এন্টারপ্রাইজের মালিক। এখানে তার বিনিয়োগ আছে এক কোটি ১৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকার বেশি। এক লাখ ২৫ হাজার টাকার অলঙ্কার আছে মুসলিমা খাতুনের। এর বাইরে তার নামে আরও অনেক সম্পত্তি আছে। যার কোনো বৈধ উৎস নেই। সব মিলিয়ে মুসলিমা খাতুনের দৃশ্যমান অবৈধ সম্পদের মূল্যমান প্রায় ৩ কোটি টাকা।
টুকুর ছোট পুত্র নাফিস শামসের নামেও আছে প্রচুর সম্পত্তি। তিনি সোলার আই লিমিটেডের পরিচালক এবং মেসার্স গ্রীন টেকনোলজির মালিক। ব্যবসায় পুঁজির পরিমাণ তার দাবিমতে, ২৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ৫১ লাখ টাকার জমি আছে তার নামে। তবে জমির এই দাবিকৃত দাম একেবারেই সঠিক নয়। পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার পায়না ও তেঘরী মৌজায় ৪০ বিঘা জমি প্রতি বিঘা সাড়ে চার লাখ টাকা হিসেবে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্রয় করেছেন। ক্রয়কৃত ভূমি উন্নয়ন খাতে তিনি আরও এক কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। এসব সম্পদের বাইরেও আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে তার বিনিয়োগ আছে। আয়করপত্রে নিজেই উল্লেখ করেছেন পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগের কথা। সব মিলিয়ে নাফিস শামসের দৃশ্যমান দুর্নীতিলব্ধ আয় প্রায় ৫ কোটি টাকা।

টাকার হিসাব জটিল
ব্যাংকের আমানত, জমি ক্রয়, নামে বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ কোথায় নেই টুকু পরিবারের টাকা। অনেকের অভিযোগ দেশের বাইরেও টাকা পাচার করেছেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা। টুকু ও তার পরিবারের সদস্যদের দেয়া তথ্যানুযায়ী এবং তার দুই পুত্র ও পুত্রবধূর প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ও অর্থের পরিমাণ হিসেবে তাদের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ এর সঙ্গে আরও যোগ করতে হবে। টুকুর পিএস আনিসুজ্জামান দোলন ও তার পরিবারের নামেও আছে প্রচুর সম্পত্তি। নামে বেনামে আত্মীয়স্বজন এবং ভাই ভাতিজাদের নামেও অনেক কিছু করা হয়েছে। এই জটিল টাকার হিসাব মেলানো কঠিন। তবে তার নির্বাচনী এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন, তদন্তের সুবিধা দেয়া হলে তারা টুকু পরিবারের ৩০০ কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তির পূর্ণ বিবরণ হাজির করতে পারবেন। দুদক ঠিকঠাক কাজ করলে এর চেয়ে আরও বড় হিসাব বেরিয়ে আসবে। দুদকের তদন্ত এখন কোন পর্যায়ে তা জানতে আমরা কথা বলি দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। আপনি সাহাব উদ্দিন সাহেবের সঙ্গে কথা বলেন।’ দুদকের তদন্ত পরিচালক সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে মন্তব্য করা আমার এক্তিয়ারের বাইরে। সময় হলে আপনাদের ডেকে জানানো হবে।’
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা কথা বলি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে পক্ষ বিপক্ষ আছে। এসব আমার শত্রুরা আমার বিরূদ্ধে রটাচ্ছে। এগুলো প্রচার করে আমাকে কিছু হেনস্তা করতে পারবেন। কিন্তু এসব প্রমাণ করতে পারবেন না।’ তার পুত্র আসিফ শামসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উৎসঃ   সাপ্তাহিক